আজকাল তো অনেক লিস্টি বার হয় হাজারটা ওয়েবসাইটে। ‘বিয়ে করার ১০টা কারণ’, ‘বিয়ে না করার ১০টা কারণ’, ‘মায়ের কাছে ক্যাল খাওয়ার ১০০টা কারণ’ ইত্যাদি। যদি এমন কোনো তালিকা বেরোয়, ‘কলকাতায় না থাকলে যে ১০টা গান শোনা উচিত না’, তবে আমার মতে সেই তালিকার শীর্ষস্থানে হবে কবির সুমনের ‘প্রথম সবকিছু’। বিকেলের নেমে আসা ত্যারছা রোদে সেপিয়া হয়ে আসা পুরোনো বইয়ের পাতা উল্টানোর মতো এই গানটাও এক ঝটকায় আমাদের সবার জীবনের কিছু পৃষ্ঠা উল্টে দেয়, গানটির শব্দ অনুসারে তারই কিছু চ্যাপ্টার নিয়ে আলোচনা করছি।
প্রথম স্কুলে যাবার দিন: নব্বই দশকের প্রথম দিকের মে মাসে। মা টিফিনে দুটো কলার টুকরো দিয়ে দিয়েছিল, একটা খেয়েছিলাম আর একটা খায়নি। আমার উল্টোদিকে যেই মেয়েটি বসেছিল যদ্দুর মনে পরে তার নাম মধুরিমা। একটু পর মাঠে খেলতে পাঠিয়েছিল। যথারীতি খেলিনি, দোলনার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর কোনো কারণে দোলনার একটা বারি খেয়েছিলাম পিঠে।
প্রথমবার ফেল: সপ্তম শ্রেণীর জ্যামিতি। ৩০-এ ১১ পেয়েছিলাম, পাসের নাম্বার ছিল ১২. চিরকালই একটু ক্লামসি হওয়ার কারণে তাড়াতাড়িতে কম্পাস দিয়ে কনস্ট্রাকসনগুলো করতে পারিনি।
প্রথম দেখা হাওড়া থেকে ছেলেবেলার রেল: ক্লাস ৪-এর বিষ্ণুপুর ঘোরা, চার ঘন্টার আপার বার্থে যাতায়াত। এর আগে ট্রেনে চড়েছি তবে শিয়ালদা থেকে।
প্রথম শেখা ইমন রাগ: ক্লাস ৫-এর নভেম্বর মাস, বন্দিশটা ছিল ‘এরি আলী পিয়া বিনা সখী।’ প্রশান্ত স্যার ৫টা তান শিখিয়েছিলেন, ৪তে ৮মাত্রা আর একটা ষোলো মাত্রার।
প্রথম ঝাপতাল: নাচের পরীক্ষার সূত্রে, ক্লাস ৫-৬ হবে। কোনো কালেই নাচে ডিস্টিংসন পাইনি যদিও।
প্রথম বার নিজামে গিয়ে কাবাব ভরপেট: নিউমার্কেটে পূজার মার্কেটিং করে ফেরার সময়। তখন মার্কেটিং বলতাম, শপিং বলতাম না।
প্রথম প্রেমে পড়ার পর সবাই পস্তায়: ক্লাস ৮-এ একটা মারকাটারি ক্রাশ ছিল ব্যাকস্ট্রিট বয়েজের নিক কার্টারের ওপর। পাগলের মত এমটিভি দেখতাম শুধুমাত্র ব্যাকস্ট্রিট বয়েজের ভিডিওগুলোতে নিকের দুচোখের পাশে নেমে আসা সোনালী চুলের ফ্রিঞ্জ দেখতে।
প্রথম দেখা লাল নিশান মিছিল কলতান: সিপিএম-এর আমলে বেড়ে ওঠার কারণে এটা যে জ্ঞান হওয়ার আগে থেকে দেখব বলাই বাহুল্য।
প্রথম দেখা ভিখারিনীর কলে শহীদ শিশু, প্রথম দেখা আস্তাকুড়ে কলকাতার যিশু: শেয়ালদা স্টেসনে যাতায়াত করার ফলে রোজকার দৃশ্য ছিল। একবার জাদুঘরে একটা বাচ্চাকে ভিক্ষা করতে দেখে বাড়ি এসে চোখ লাল করে প্রচন্ড কেঁদেছিলাম, দিনটা এখনও মনে আছে।
প্রথম দেখা দিনে দুপুরে পুলিশ ঘুষ খায়: বাসের সামনের দিকে ড্রাইভারের পাসের সিটটায় বসলে সব বাচ্চারই চোখে পড়বে, মামা জানলা দিয়ে হাত গলিয়ে কিছু একটা নিয়ে গেল।
প্রথম দেখা পয়সা দিয়ে সবই কেনা যায়: আর নাই বা বললাম।
আজকের মত বিদায়!