এক পুরো ভারতীয়, তিন-চতুর্থাংশ বাঙাল, আধা মফস্বল, এক চতুর্থাংশ উত্তর কলকাতাইয়া বাড়িতে বেড়ে ওঠার ফলে আমার মৌখিক বাংলা “সকল রসের ধারায়” পরিপুষ্ট। একদিকে যেমন ‘গিয়াছিলাম, করিয়াছিলাম, অপূপ, চিত্রব্যাঘ্র’ জাতীয় সংস্কৃত-ঘেঁষা সাধুভাষার সাথে ইস্কুলের ধারাপাতের পাঠের মাধ্যমে পরিচয়, তেমনি সমান্তরালভাবে বাড়িতে দাদু-দিদার ছত্রছায়ায় মৌখিক বাঙাল ভাষার সযত্নের লালন-পালনের ফলে ‘কাঁচানো, কেঁচি, বাস্কো, খাউব্বা, উলুক-ভুলুক, পিয়ে খাওয়া, থো’-এর মত ভাষাও আমার শাব্দিক-অভিধানকে সমৃদ্ধ এবং সংবর্ধিত করেছে।
টেলিভিসন নামক ভীষণ বস্তুটির দৌলতে একটা জিনিস বুঝতে পারতাম যে উপরোক্ত বাক্যের দ্বিতীয় শ্রেনীর শব্দগুলি তথাকথিত ভদ্রসমাজে উল্লেক করলে খানিক বিস্ময়-খানিক ‘কন্ডিসেন্ডিং’ মনোভাব নিয়ে সুধীবৃন্দ আমার দিকে বিস্ফারিত নেত্রে তাকাবেন, তাই বাড়ি থেকে পই-পই করে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল আমি যেন ইস্কুলে খবরদার আমার তিন-চতুর্থাংশ বাঙালপনা প্রকাশ না করে ফেলি। নিতান্ত বাধ্য ছাগীশিশুর মত আমিও সেই ফরমান মাথা পেতে গ্রহণ করেছিলাম, তখনও ‘সাংস্কৃতিক হেজিমনি, সিন্ডিকেটেড বেঙ্গলিজ্ম, ভাষার অতিসরলীকরণ’ এই জাতীয় গুরু আলোচনা আমার লঘু মস্তিস্কে স্থান পায়নি। একমাত্র আমার দাদু-দিদার জীবনচর্চার রোজনামচায় সীমাবদ্ধ ছিল আমার এই বিকল্প বাংলা শিক্ষার পাঠ (যদিও মাধ্যমিকের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে ‘পয়সা কাল দিমু কুবের’ পড়ার সময় আমার বিকল্প বাংলা শিক্ষা মূলধারার শিক্ষার সাথে এসে মিলে গিয়েছিল)।
এত বড় গৌরচন্দ্রিকার পর এবার মূল কথায় ফিরে আসা যাক। আজ কিছু শব্দ নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছা করছে। যেমন, আমি জল ‘পিয়ে’ খাই না। মানে, ঠোঁট যেন বোতল বা গেলাস না স্পর্শ করে। একই অর্থ প্রকাশের জন্য ‘চুমুক দেওয়া’ শব্দগুচ্ছটি তথ্যতত্ত্বের বিচারে ‘পিয়ে’-র চেয়ে কম সাশ্রয়ী। ‘ল্যাবত’ শব্দের অর্থের সাথে অনেকেই পরিচিত, বিশেষ করে আমার সুহৃদকুল, আমার প্রিয় অপভাষা হওয়ার দৌলতে। আমি কোনো জিনিস এখানে সেখানে রাখি না, বরং ‘থুই’, চরণামৃত নেওয়ার সময় ‘বাটির মত’ হাত করি না, হাত ‘খাউব্বা’ করি, দুটো না ‘দুগা’ ভাত খাই।
শেষে যেই শব্দটা নিয়ে একটু বেশিই ভাবতে ইচ্ছা করছে তা হলো ‘কাঁচানো’, কারণ এর এক-কথার সমার্থক শব্দ শিষ্ট-অশিষ্ট কোনো বাংলা ভাষাতেই আমার জানা নেই। যদি আমি কাঁচিয়ে খাই, এর মানে ‘চেটেপুটে খাওয়া’। তবে চেটেপুটে শব্দটার সাথে একটা শ্লীল ও ভদ্রভাবে খাওয়ার চিহ্ন আছে, কাঁচিয়ে খাওয়ার মধ্যে সেই সুস্থতার আভাস অতটা পাওয়া যায় না, বরং জঠরের দাবানলের সাথে সঙ্গত করে বন্য হস্তসঞ্চালনের-ই অধিকতর ইঙ্গিতবাহী। আবার, লক্ষ্মীপূজার সময় আমি পাথরের বাটি থেকে কাঁচিয়ে খড়িমাটি দিয়ে আল্পনা দিতে পারি, বেগুনি করার সময় শেষ বিন্দু ব্যাসনটাও অপচয় না করার জন্যে বাটি কাঁচাতে পারি।
কাঁচানো শব্দটার মধ্যে কথাও যেন একটা পরিপূর্ণতার আভাস পাই। মানে, সূচ্যগ্র মেদিনী অপচয় নয়, নিজের সারাত্সার উজার করে কাজ করে যাও, কিছু রেখে যেও না, জীবনপাত্র থেকে উচ্ছলিত হয়ে মাধুরী যেন বাইরে না পড়ে। বর্তমানের পোলাপানের মুখে যে শুনি ‘কার্পে ডিয়েম, লিভ লাইফ টু দ্যা ফুলেস্ট’ তার সংক্ষিপ্ততম বঙ্গানুবাদ ‘কাঁচিয়ে বাঁচো’।
ja mone hoche, knachano==chneche-puchhe. sob kota orthei use hoy.
piye ta actually sanskrit er anek closer than epaar banglar analogous shobdo. eta ami lokhyo korechi, opaar banglar shobdo gulo anek somoy i sansrit/ sadhu bhasar beshi close. nischoy bhshatawik ra karon ber korechen, amar jana nei.
tor shobdo gulo r akta o ami jantam na 😦 lyabot mane ki?
Ashole oipar banglar bhasha monehoy intermediate step cholit banglar evolutione. Lyabot mane tyala. 😀