তিন পায়ের গল্প

।।১।।
গ্রীষ্মের দুপুর। যারা ওই নব্বইয়ের দশকেই ছাত্রজীবন শুরু করার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিল, তাদের খুব একটা পড়তে হতো না গরমের ছুটিতে। তাই তিন মেয়েকে ভাত খাইয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে টিভিটা আস্তে করে চালিয়ে দিল মৌলি। খাটে বসতে না বসতেই ও ঘর থেকে হালকা স্বরে নামকীর্তন শুনতে পেল।
“পা রাখ পা রাখ পরপর, দেখি ছোটর পা আমাদের থেকে কতটা ছোট।”
“বড়দি আমাকে আলতা পরিয়ে দিবি আজ বিকালে।”
রিনরিনে গলায় জানালো ছোট। ক্ষোভের কারণটা খুব একটা অযৌক্তিক না, বড় দুজন গতকাল পাড়াতে পৌরসভা থেকে পার্ক-উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ফাংশানে নেচে বাহবা কুড়িয়ে এসেছে। আর কত্থক নাচের অপরিহার্য অঙ্গ লাল আলতা দেখে ছোটোর একটু ঈর্ষা হওয়াটা অস্বাভাবিক না।
“ঠিক আছে।”
“তোদের কি মজা। তোরা এ-ওর জুতো পড়তে পারিস, আর আমাকে মা তোদের পুরোনোগুলো পড়ায়। এবার স্কুল খুললে আমাকে নতুন কেডস না কিনে দিলে আমি দেখবি কিরকম বায়না করি।”
“ঠিক আছে, মা কে বলিস।”
“তোরাও কিন্তু মাকে বলবি আমার সাথে। নাহলে কিন্তু মাকে বলে দেব একবার তোরা একে অন্যের অঙ্কখাতায় মার সই নকল করেছিস।”

।।২।।
“চুপ চুপ মা আসছে। ঘুমের ভান কর।”
বড়টা বাকি দুটোর মাথার ওপর চাদর টেনে দিয়ে মটকা মেরে পড়ে রইলো। শোবার ঘরের লাইটটা জ্বেলে মুখ বাড়াল মৌলি। ভুঁরু কুঁচকে একবার ভাবলো, এবার থেকে ছোটটাকে আলাদা ঘরে শোয়াবে। বড় দুটোর ডে স্কুল, কিন্তু ছোটটাকে অনেক ভোরে উঠতে হবে। কিছুক্ষণ আগে ওদের বাবাকে খেতে দেওয়ার সময়েও বড়টার ডমিনেটিং, ছোটটার ইম্পোসিং আর মেজটার পিস-কিপিং গলার আওয়াজ পেয়েছেন। তাই এটা কোনমতেই বিশ্বাসযোগ্য না যে এরা এখন অধেক ঘুমে নয়ন চুমে পাশ ফিরে শুয়ে আছে।

আর আরেকটা কারণও আছে। বড়টার ক্লাস ইলেভেন, মেজটার টেন আর ছোটটার সেভেন। বড়-মেজ এখন যেই মধুমাখা সময়ে পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে আর এই ফলে ও ফলে ঠোক্কর দিচ্ছে, ছোটটাকে ক্লাস সেভেনেই কার্বাইডে পাকানো সেই ফল খাওয়ানোর কোনো দরকার নেই। তবে চেষ্টা করে সফল হয়নি সে এর আগে। দিদিদের সাথে না শুলে নাকি ওনার ঘুম আসে না। আসল কারণ কি আর সে বোঝে না। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের মেয়েদের ক্লাসের পর-নিন্দা-পর-চর্চা নিজের ক্লাসে একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে হিরো সাজার চেষ্টা। মেজটার পা টা বেরিয়ে আছে চাদরের তলা থেকে। আলগোছে সেটা টেনে দিয়ে লাইট নিভিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে।

“ইশ দেখ নেল পালিশটা একদম থেবড়ে গেল চাদরে ঘষা লেগে। মা যে কি করে না!”
মেজ উঠে বসেছে। বড়ও একটু চোখ লেগে আসা ঘুম থেকে জেগে উঠেছে সটান।
“এই কারণেই বলেছিলাম তাড়াতাড়ি খেয়ে নেলপালিশটা লাগাতে যাতে শুতে যাওয়ার আগে শুকিয়ে যায়। এবার বোঝ ঠেলা। নষ্ট করলি তো। এত ছড়াস না সারাক্ষণ!”
“আমাকে তো পড়তে দিলি না রংটা, বেশ হয়েছে। আমি নজর দিয়েছিলাম তাই থেবড়েছে।”
ছোট পাশ থেকে টিপ্পনি কাটলো।
“ইশ উনি পড়বেন নেলপালিশ। আর তুই তো হাতে পরার চেয়েছিলি। এই সেদিন মিসেস মুখার্জীর কাছে ধরা পরে আমাদের হাউস থেকে পয়েন্ট কাটা গেছে তোর নেলপালিশ পরার জন্য। তাও তোর শিক্ষা হলো না।”
বড়-মেজ এবার মাধ্যমিকের ইতিহাসের প্রথম চ্যাপ্টার বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য প্রদর্শনে ব্যস্ত।

।।৩।।
“এই বড়দি, মেজদির পা টা একবার দেখ।”
“মেজ, দাঁড়া। ”
“ঘুম পাচ্ছে, খামকা দাঁড়াতে যাব কেন।”
“পায়ে ওটা কি?”
“কি আবার। মল। জানিস তো ওটা ছোট থেকেই পরি। আজ আবার দেখতে চাইছিস কেন।”
“খুব ভালো করেই জানিস কেন। মলটা মোটেও দেখতে চাইছি না। আংটিটা কোত্থেকে পেলি?”
“গড়িয়াহাট থেকে।”
“মিথ্যা বলার জায়গা পাওনি চাঁদ। তুমি আমার সাথে ক্যাম্পাস থেকে যাতায়াত কর, গড়িয়াহাট কবে গেলে?”
“আরে বড়দি, ও কি একবারও বলেছে নিজে গড়িয়াহাট গেছিল, জিজ্ঞেস করে দেখ মম হৃদয়রক্তরাগে তব চরণ দিয়েছি রাঙিয়া কেস কিনা।”
“তার মানে যা শুনছি সব সত্যি। তুই নাকি সোশিও ক্লাস করছিস না একটাও আজকাল?”
“আহ ওটা তো ফালতু। তোর সব নোট নিয়ে নেবো।”
“শুধু তাই? সেদিন সুছন্দা বললো তোকে মেকানিকালের অসীমের সাথে সাউথ সিটিতে দেখেছে।”
“হ্যা মানে, না মানে। আমাদের ক্লাসের সবাই এই সাউথ সিটি নতুন হয়েছে বলে দেখতে ছুটল, আমিও গেলাম, সেখানে দেখা হয়ে গেল আর কি।”

।।৪।।
আজকের রাতটা ঠিক করেছে ওরা গল্প করেই কাটাবে। মা-ও আজ তাড়াতাড়ি শুতে বলেনি। কিরকম একটা পাথরপ্রতিমার মত হয়ে গেছে। কালকে বড়দির ফ্লাইট। সুছন্দাদি আমেদাবাদ যাওয়ার সময় কাকিমা নাকি খুব কেঁদেছিল। ওরা ভেবেছিল মা-ও সেরম কিছু একটা করবে। কিন্তু না, মা নিজেকে কেমন একটা আর্মাডিলোর অতি শক্ত খোলসের মধ্যে পুরে রেখেছে।
“বড়দি তুই কবে আসবি আবার?”
“দেখি, টাকা কিরকম জমে আর গাইড কাজ কিরকম দেয়।”
“নেক্সট টাইম আসার সময় কিন্তু আমার জন্যে একটা ভালো জুতো আনবি। অসীমের দাদা বলেছে, ওদেশে নাকি ব্র্যান্ডেড জিনিস অনেকসময় সস্তায় সেলে পাওয়া যায়। চোখ কান খোলা রাখবি।”
“আর আমার জন্যে লোরিয়ালের নেল পালিশ।”
“আরে আগে গিয়ে তো দেখি! তোরা এমন ভাব করছিস আমি যেন ওখানে শপিং করতে যাচ্ছি শুধু। এখন ঘুমা তো।”

এমনিতে বাদিকে শুয়ে অভ্যস্ত বড় ডানপাশে দেওয়ালের দিকে ফিরলো আজ। না ফিরলে দেখত যেই মেজ-ছোট এতক্ষণ ধরে এটা-ওটা আনার ফিরিস্তি দিয়ে গেল, তারা কানে কানে গুজগুজ করছে, বড়দিকে না বলে ওর সুটকেসে দশ বছর ধরে জমিয়ে রাখা চার্টপেপারটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা। কোনো এক দুপুরে এই ঘরের মাটিতে বসেই তিনজন একটা কাগজে ডানপায়ের পাতা পাশাপাশি রেখে আউটলাইন করেছিল। সেই বয়েসে তিনটে পায়ের পাতা একটা কাগজে ধরে যেত, আর আজ তিনটে মন একটা সুটকেসে।

Posted in সং থেকে বং, অনাবাসী ঢং | Leave a comment

অতি-সামাজিকতা

গতকাল জ্যাকি কলিন্স মারা গেলেন ৭৭ বছর বয়েসে। যারা এটা পড়ছেন, তাঁরা যদি শ্রীমতী কলিন্সকে না চিনে থাকেন নিজেদের সম্পর্কে অযথা হীনমন্যতার স্বীকার হবেন না, কারণ ট্যাঁশ ইস্কুলের পাকা বাচ্চা ছাড়া কেই বা ওনার হলিউডের পাপারাত্জি নিয়ে মাথা ঘামাবে। যাই হোক, আস্তে আস্তে আইআইটি, আইএসআই, এএইইইই পার হয়ে যখন জয়েন্টের বৈতরণী পেরিয়ে গেলাম তখন ‘ইশ কবে কলেজ যাব’ এই জাতীয় বেয়াড়া চিন্তাভাবনার মধ্যে খুব আমড়াগাছি ভাবে সময় কাটানোর ফাঁকে ফাঁকে কিছু বইয়ের মধ্যে শ্রীমতী কলিন্সের একটি রচনাও পড়ে ফেলেছিলাম। বই ছাড়াও ইস্কুলের বিভিন্ন বন্ধুদের সাথে ফোনে চলত কথোপকথন।

তেমনিই একটি ওলো সই ওলো সই-এর সময় একটি বন্ধু বলে, “এই তুই অর্কুট করিস?”
“সেটা আবার কি?”
“একটা সাইট আছে, সেখানে লোকজনকে স্ক্র্যাপ করতে পারবি।”
“করে করবটা কি?”
“এই এমনি, কন্ট্যাক্ট রাখা।”
চেপে গেলাম তখনকার মত। কম্প্যুটারে হাত যত কম দেওয়া যায় ভালো। আজেবাজে কাজে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয়না।

কীকরে যেন দেখলাম হট করে সময়টা হঠাত খুব তাড়াতাড়ি কাটা শুরু করলো উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর পর, এবং সময়ের বেদম ধাক্কায় জয়েন্টের রেজাল্ট দেখা, কাউন্সেলিং এবং ড্যাং ড্যাং করে যাদবপুরের প্রথম দিনের ক্লাসটাও করা হয়ে গেল। একটা চিন্তা মাথায় ঢুকলো, কম্পিউটারটা শিখতে হবে। আমি ইস্কুলে পড়ার সময় কম্পিউটারে হাত দিলেও এই যন্ত্রটিকে ঠিক পছন্দ করতাম না সেই সময়ে, এমনকি একটি ইমেল আইডি তৈরী করতেও ছিল মহা অনীহা। সেই সময় নাগাদই বাড়িতে প্রথম ডেস্কটপটি ঢোকে। কিন্তু ঢুকলে কি হবে, চালাতে তো পারি না, তাই ছুটলাম আমার দিদির বাড়ি। আরো একটা কারণ ছিল, ওর থেকে সি প্রোগ্রামিং নামক ‘এটা খায় না মাখে’ গোছের বিষয় নিয়ে কিঞ্চিত জ্ঞান আরোহণ।

একটি শনিবারের বিকালে আমার দিদির বাড়িতে হাজিরা, জীবনে কখনও প্রোগ্রামিং করিনি আগে, তাই কিকরে এই স্টাডি অফ এনসিয়েন্ট রিউন্স মার্কা বিষয়ে খানিক জ্ঞান আহরণ চললো। শুষ্কং কাষ্ঠং জ্ঞানের মূল্য কীই বা, তাই একটু পরেই ইন্টারনেট কানেকসন চালু হয়ে গেলো। সেদিনই জীবনের প্রথম ইমেল তৈরী করলাম ইয়াহুতে। ঠিক তার পরেই বোধহয় আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল। দিদি বলল, “স্বাতী, অর্কুটে একাউন্ট খোল।” এবার আমার উত্তেজনার পারদটা একটু একটু চড়ছে। কৌতুহল বিড়ালকে না মারলেও আমাকে মেরেছিল।

সেই আমার অসামাজিকতার হাতেখড়ি। কিকরে যেন এক মুহুর্তে ‘হুম হোয়াটেভার’ থেকে ‘ওএমজি ইট্স সো মাচ ফান’ এইরকম প্রত্রিক্রিয়ার পরিবর্তন হলো অর্কুট সম্পর্কে এক মুহূর্তেই। এখনকার মত পটাপট সেলফি তোলার ঝোঁক না থাকায় প্রফাইলে ছবি দিলাম কিছু একটা হাবিজাবি। বুঝতে শিখলাম স্ক্র্যাপ কাকে বলে। “ও মাআআ, ইস্কলের কত কে আছে দেখছি! ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই!” বলে ব্যাচের বেশ কিছু মেয়েকে পাঠালাম। তখনও ঠিক সিনিয়রদের রিকোয়েস্ট পাঠাতে সাহস হতো না। এই ভাবে বেশ কিছু সময় নষ্ট করে বাবার তাড়া খেয়ে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হলাম।

সেই সময় নাগাদই বাড়িতে ডায়াল আপ ইন্টারনেট ঢুকলো। আমাকে দিয়ে প্রায় সরকারী স্ট্যাম্পপেপারে লিখিয়ে নেওয়া হলো, একমাত্র পড়াশোনার কাজ ছাড়া ইন্টারনেট খরচা একদম করব না। কিন্তু ততদিনে আরো একটি হীরের খনির সন্ধান পাওয়া হয়ে গেছে। বাড়িতে না করতে পারলেও বা কি, ডিপার্টমেন্টের পিসি ল্যাব নামক স্বর্গে বেশ ভালোমতো ঠেঁসে ইন্টারনেটে যা ইচ্ছা করা যায়। ফার্স্ট ইয়ার ফার্স্ট সেমেস্টারে মঙ্গলবারে খুব একটা ক্লাস থাকত না। সকালে দুই পিরিয়ডের পর বেশ অনেকটা সময় পরে বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ আবার ক্লাস। প্রথম প্রথম সুবোধ বালিকার মত সেন্ট্রাল লাইব্রেরির রিডিং রুমে ঢু মারলেও তারপর থেকে পিসি ল্যাবেই কাটতে লাগলো সময়। অর্কুটের নেশা তখন শুধু আমি না, প্রায় গোটা ব্যাচেই ছড়িয়ে গেছে। নামকেওয়াস্তে দুটো সি প্রোগ্রাম লিখে কাজ করার ভান করি, আর বাকি সময়টা কাটে শুধুই আশেপাশের টেবিলে বসে থাকা জনগনকে স্ক্য্রাপ করে। জেইউ ইটিসিই গ্রুপটায় জয়েন করা হয়ে গেছে ততদিনে। এমনকি সিনিয়রদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেও আর আগের মত ভয় লাগে না।

সেই পিসি ল্যাবে একজন স্যার ছিলেন। এচঁড়ে পাকা ফার্স্ট ইয়ারদের এই বাড়াবাড়ি আর দৌরাত্ব ওনার চোখ এড়ায়নি। তেমনি কোনো এক মঙ্গলবারে একটা মেশিনের সামনে জটলা করে ইয়াহু মেইলে আসা কিছু পাইকারী হারে ফরওয়ার্ড নিয়ে অট্টহাস্য চলছে সকল বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে।
এমন সময় সেই স্যারের খুব রাগী গলা, “অনেকদিন ধরে খেয়াল করছি, কিছু ফার্স্ট ইয়ার কোনো ক্লাস না করে সারাদিন চেচামিচি করছে এখানে।”
“না মানে স্যার, আমাদের ক্লাস নেই এখন, তাই….”
“তাই? এখানে এসে হট্টগোল করতে হবে? আসল কাজ ছাড়া যদি আর এই মুখগুলোকে আর একবারও এখানে দেখি….”
কাঁচুমাচু মুখ করে বেরিয়ে এলাম। আহা, স্বর্গ থেকে বিতাড়িত সাপমোচনের মধুশ্রী।

ততদিনে বাড়িতে একটা ছোটখাটো বিপ্লব হয়ে গেছে। ‘পড়াশোনা’-র ফাঁকে ফাঁকে টুকটুক করে অর্কুট খোলার অভ্যাসটাও গজিয়ে গেছে। নভেম্বর মাস নাগাদ আমাদের এক সহপাঠী একটি কম্যুনিটি তৈরী করে, “জেইউ ইটিসিই ফার্স্ট ইয়ার”। মাকে কথাটা বললাম একদিন খেতে খেতে।
“তোদের তো একে অপরের সাথে রোজ দেখা হয়, তাহলে এসবের মানে কি!”
মানেটা বুঝেছিলাম তার চার বছর পর। “জিউ ইটিসিই ফার্স্ট ইয়ার” নাম পরিবর্তন করতে লাগলো বছর বছর। “জেইউ ইটিসিই সেকন্ড ইয়ার”, “জেইউ ইটিসিই থার্ড ইয়ার”, “জেইউ ইটিসিই ফোর্থ ইয়ার”। শেষে সারাজীবনের মত একজায়গায় স্থির হয়ে রইলো, “জেইউ ইটিসিই ২০০৬-২০১০”।

আসল কেত দেখানোর মঞ্চ ছিল অর্কুটে নাম লেখা। পরিবারদত্ত নামটি কেই বা লেখে, তাই একদিন খুব কায়দা মেরে লিখলাম, “শ্যামা তন্বী আমি মেঘ বরনা”। পরেরদিন অচেনা একটি স্ক্র্যাপ, “বাংলা হনার্স?” যদ্দুর মনে পরে, নিজের নামটা কখনই রাখিনি অর্কুটে। ইংরাজি, বাংলা গান, এমনকি ইংরাজি গানের ফরাসী অনুবাদ পর্যন্ত ঠাই পেয়েছে আমার আসল নামটা সরিয়ে। অনেক মহামানব/মহামানবী আবার নিজের নামটি লিখতেন, সাথে একগাদা ~~!!~~**.

থার্ড-ফোর্থ ইয়ার থেকেই বোধহয় আমরা অর্কুট এডিক্ট হয়ে পরি। থার্ড ইয়ার ফার্স্ট সেমে ‘প্রপাগেসন’ নামক একটি মহার্ঘ্য বিষয় গাঁত করতে হতো। পরেরদিন ক্লাস টেস্ট, রাত দশটা-সাড়ে দশটা প্রায় বাজে। দুচোখের সামনে অতিরিক্ত সরিষার পুষ্প দেখার ফলে কোনসেল গুলো প্রায় স্যাচুরেট করে গেছে। ‘চুলোয় যাক সব মায়ের ভোগ’ জাতীয় দুঃসাহসিকতায় রাতে খেয়ে দেয় বসে গেলাম অর্কুট করতে। ৫৫ জনের মধ্যে বাড়িতে ইন্টারনেট আছে কিংবা বাড়ির কাছে সাইবার ক্যাফে আছে, সবাই অনলাইন। পরের দিনের পরীক্ষা ছাড়া সব রকম বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। এই সময় নাগাদ আমাদের একজন ভগবানস্থানীয় ব্যাচমেট এই সময় ওনার দিল্লী ইন্টার্নশিপের কাব্যকাহিনী লিখতে শুরু করেন, এবং গোটা গ্রীষ্মকাল জুড়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে সকলে। সেই শিল্পকর্মগুলী উনি ফেসবুকে স্থানান্তরিত করেছেন কিনা জানি না।

ফোর্থইয়ার সেকন্ড সেমেস্টারে অর্কুট আর ফেসবুক দুটো একসাথে করা শুরু হলো। তখন ফেসবুক ব্যবহার করতাম কেবলমাত্র মবওয়ারস খেলতে আর অর্কুটের মাধ্যমেই যাবতীয় কথোপকথন চলত। এই অর্কুটের মাধ্যমেই প্রথম সেই বছর অস্টিনে আশা অন্যান্য ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সাথে কিছু আলাপ পরিচয় ঘটে। তবে তখন অর্কুটের মন্দা শুরু হয়ে গেছে, বুঝতে পারছি যাব যাব করছে সেই পুরনো দিনগুলো। আজ হঠাত এতগুলো কথা লিখে ফেললাম, সেই পুরোনো নাম দেওয়ার অভ্যাসের কথাটা মনে হওয়ার ফলে।

ইতি-
মাধ্যমিকের বাধ্য মেয়ে।

Posted in General stuffs | Leave a comment

শিক্ষক দিবস স্পেশাল

কদিন আগেই চলে গেল শিক্ষক দিবস। আজ এতগুলো বছর পর একজনের শিক্ষকের কথা খুব মনে পড়ছে, তাই সময় সুযোগ পেয়ে লিখে ফেললাম কয়েকটা লাইন।

ওনাকে দেখি প্রথম দিন ওরিয়েন্টেশনের সময়। সিনিয়র প্রফেসরদের মধ্যে অন্যতম, চুল পাকা, গায়ে সাহেবী কোট, গলায় টাই। দেখে মনে হয় ৬০-৭০-এর দশকের চলচ্চিত্র থেকে উঠে আসা আদর্শ প্রফেসরের চরিত্র। নতুন জীবনের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ নেওয়ায় ব্যস্ত সপ্তদশী তখন, তাই একে একে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যখন নিজেদের পরিচয় দিলেন, তখন সবার নাম মনে রাখতে পারিনি। পরে জানলাম উনি পি কে বি স্যার, থার্ড ইয়ারদের পড়ান, কি বিষয় পড়ান তখনও জানি না।

দেখতে দেখতে একটু বড় হলাম। সেকন্ড ইয়ার সেকন্ড সেমেস্টার শেষ, সামনে অন্তহীন গ্রীষ্মাবকাশ। এত ইন্টার্নশিপ করার চল ছিল না তখন, তাই ছুটিতে কত কেজি আম আর কত টন ল্যাদ খাব সেই চিন্তায় মগ্ন। দু কলারের এক কলার উঁচিয়ে গাছতলায় সদর্পে ঘোষণা, “দেখলি, ৫০% ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলাম, আর দুটো বছরেই পুরো ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাব!” সেই সেকন্ড ইনিংসের প্রথম সেমেস্টারে অন্যতম ক্লাস ‘ডিজিটাল কম্যুনিকেসনস।’ পরাবেন পি কে বি। কোথা দিয়ে গরমের ছুটিটা এদিক থেকে ওদিক করে প্রথমে বিলম্বিত এবং পরে দ্রুত লয়ে বেরিয়ে গেল। চলে এলো থার্ড ইয়ারের প্রথম দিন। একটা বেশ বড় বড় ভাব, কারণ নীচে দু ব্যাচ জুনিয়র।

বলাই বাহুল্য, প্রথম সপ্তাহে ক্লাস খুব একটা কিছু হয় না। টি-৩-৭-এ সেকন্ড থার্ড বেঞ্চিতে দরজার দিকে পিঠ ঠেকিয়ে আমার কেয়েকজন সহপাঠী তাস খেলতে মগ্ন। হঠাত একজনের পিঠে আলতো করে একটা টোকা। ততমত খেয়ে ছেলেটি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে পি কে বি স্যার। খুব শান্ত স্বরে বললেন, “তোমরা আমার ক্লাস করনি ঠিক আছে, কিন্তু ক্লাসঘরের পবিত্রতা বজায় রাখো। তাস খেলতে হলে মাঠে গিয়ে খেল, ক্লাসে না।” একটু অবাকই হয়েছিলাম, এর আগে কখনও কোনো প্রফেসরকে এভাবে ছাত্রদের সাথে কথা বলতে শুনিনি।

তার এক সপ্তাহ পর শুরু হলো ওনার ক্লাস। যদ্দুর মনে পরে, ১০-২০-র পিরিয়ড থাকত। হাতে গোনা যে কয়েকজন প্রফেসরের ১০-২০-র ক্লাসে ১০-২০-র আগে পৌঁছেছি, উনি তাদের মধ্যে একজন। খুবই প্রাঞ্জল ভাবে পড়ানোর ধাঁচ, যেভাবে এলিয়েসিং, ডিপিসিএম কিংবা পিএসকে পড়িয়েছিলেন জীবনে ভুলবো না। ওনার ক্লাস করার দুবছরের মাথায় যখন সিগনাল প্রসেসিং পড়াতে ডায়াসের অন্য দিকটায় দাঁড়িয়ে চক ধরতে হলো, বুঝেছি কত শক্ত শক্ত বিষয়গুলো সহজভাবে পড়াতেন স্যার। আজ যতই এই বিষয়ে কচকচি করি না কেন, ভিতটা যিনি গড়ে দিয়েছিলেন, তাঁকে না মনে করে থাকতে পারছি না। এত সহজ ছিমছাম ভাবে পড়ানোর ধরন মার্কিন দেশের গুচ্ছ গুচ্ছ সাইটেশন পাওয়া অনেক কম্যুনিকেসনস প্রফেসরদের মধ্যেও দেখিনি।

গানের ভেলায় বেলা অবেলায় হুরহুর করে কেটে গেল কয়েকটা মাস। ডিসেম্বর সমাগত। সামনে সেমেস্টার। হালকা শীতের মধ্যে যুদ্ধকালীন ততপরতায় জেরক্সের দোকানের সামনে সর্পিল লাইন আরো লম্বা হচ্ছে। স্টাডি লিভ (বা বলা ভালো সেমেস্টারের একমাত্র স্টাডি টাইম) শুরু হওয়ার আগে পি কে বি স্যারের শেষ ক্লাস। এখনও মনে আছে, সেদিন এমএসকে পড়িয়েছিলেন। বেশ শক্ত জিনিস। ঠিক থাক বুঝেছি কিনা ঠাহর করতে না করতেই ১-৪০এর ঘন্টাটা পড়ে গেল। নোট গুলো গুছিয়ে নিয়ে পি কে বি ক্লাসের দিকে লক্ষ্য করে একটা বাক্য ছুড়ে দিলেন, ‘আজ আমার শিক্ষকজীবনের শেষ ক্লাস।’ বলেই চোখ আঙ্গুল দিয়ে মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে অতি দ্রুতগতিতে।

সবার মধ্যে একটা আলোড়ন। একজন মানুষ এতগুলো বছর যেই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত, তার শেষ ক্লাস নিতে গিয়ে কিভাবে এরকম ভাবলেশহীন হয়ে পড়াতে পারেন। শুধু একটা কথাই মনে হতে লাগলো, “আজ থেকে ETCE-র T-টা কি কানা হয়ে গেল?”

Posted in সং থেকে বং, অনাবাসী ঢং | Leave a comment

গানে মোর ইন্দ্রধনু

২০০৭ সাল। জুলাই মাস। সেকন্ড ইয়ারের ক্লাস খাতায় কলমে শুরু হলেও পাতায় কলমে শুরু হয়নি, প্রথম সপ্তাহে কোনদিনই ক্লাস হয় না। সেমিস্টারের প্রথম উইকএন্ড। দুপুরবেলা আমার কম্পালসরি ভাত ঘুম পরিত্যাগ করে টিভির সামনে বসে গেছি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দেখব বলে। এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখা। আমার অত্যন্ত প্রিয় ছায়াছবির একটি। কারণ, ভুলু-তাপসীর প্রেমকাহিনী আমার জীবনের দেখা প্রথম প্রেমকাহিনী। প্রথমবার যখন দেখেছিলাম, তখন প্রেম জিনিসটা কি জানার বয়স হয়নি। মানেটানে অত বুঝিনি। শুধু একটি অতি সুন্দর পুরুষ এবং একটি অতি সুন্দর নারীর পর্দাকাঁপানো স্ক্রিনপ্রেজেন্সের কারণে দিদার পাশে বসে দেখে গেছিলাম।

খুব কম বঙ্গললনা আছেন যারা বোধহয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখটা সুক্ষ্মকোণে রেখে ভুরুর ধনুক বেঁকিয়ে ম্যাডাম সেনের ‘ইন্দ্রধনুউউউউউ’-তে কন্ঠ, তালু, দন্ত, মূর্ধা, অধর কাঁপানোটা অভ্যাস করেননি। মিসেস সেনের লিপস্টিক লাগানোর একটা অদ্ভূত ধরন ছিল। প্রথাগত সৌন্দর্যে না বিশ্বাসী হয়ে মোটা ঠোঁটকে পাতলা না করে বরং বাংলা সিনেমাতে প্রথম জোলি মার্কা বি-স্টাঙ লুক প্রথম মনেহয় উনিই আনয়ন করেন। তবে আমার মূল আকর্ষণ ছিল এই অধর নির্গত সঙ্গীতের ওপর।

“বাবা, ইনি কি নিজেই গান করছেন?”
“না, অন্য একজন।”
তখন মনেহয় ক্লাস ওয়ানে পড়ি। ততদিনে অন্তত জেনে গেছি, সিনেমাতে কথা বলে একজন, কিন্তু গান গায় আরেকজন। শুধু ঠোঁট নাড়ানোটা প্র্যাকটিস করতে হয়।
“কে?”
“সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।”
অভিধানে সংযোজিত হলো এক নতুন নাম। আরো জানতে হবে এনার সম্পর্কে।

তখন দূরদর্শনে সন্ধ্যার দিকে প্রায়ই নানা সঙ্গীত শিল্পীর সাক্ষাতকার এবং গান দেখানো হয়। সাড়ে সাতটার উর্দু খবরের পর ছানা খেয়ে তাকিয়ে আছি টিভির দিকে, হঠাত কোনো একদিন দেখলাম এই কোকিলকন্ঠীর সাক্ষাত্কার। সেই গলা। কিন্তু খানিকটা রসভঙ্গ হলো। কমলিকার যেমন হয়েছিল অরুনেশ্বরকে দেখে, তেমন। একী! ইনি তো একেবারেই সাধারণ দেখতে নিপাট আটপৌরে একজন মহিলা। ইনি এরকম গান? ‘বিউটি বায়াস’ বোধহয় সব শিশুরই থাকে। তাই তারা মনে করে, যা কিছু শ্রেষ্ঠ তাকে সুন্দর হতেই হবে। সেই বায়াস ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যে প্রথমে এই মানুষটিকেই কুর্নিশ করতে ইচ্ছা করে।

ক্লাস ৩. আমাদের ইস্কুলের প্ল্যাটিনাম জুবিলী অনুষ্ঠিত হবে। রবীন্দ্রসদনে মর্জিনা-অব্দালাহ দেখে এলাম। একটা গান শুধু মাথায় ঘুরতে লাগলো সারাক্ষণ। ‘আয় বাঁদী তুই বেগম হবি খোয়াব দেখেছি।’ দেরী না করে পরেরদিনই বাবা ক্যাসেটটা কিনে দিল আলিবাবার। দুটো ক্যাসেট, পার্ট ১ আর ২. কদিনেই গানগুলো মুখস্থ হয়ে গেল, এবং সেই সাথে সেল্ফ কম্পোসড কোরিয়গ্রাফি। আরেকবার করে প্রেমে পরলাম সন্ধ্যাদেবীর গলার। এই একটা ক্যাসেটই আমাকে ওনার অন্ধ ভক্তে রুপান্তরিত করে দিল। ভাবতে ভালো লাগে সুন্দর গান কেমন হওয়া উচিত তার প্রথম স্বাদ পেয়েছি এমন কিছু অসামান্য মানুষের কন্ঠ থেকে।

এই বছর একটি সরস্বতীর ছবি এঁকেছিলাম। এতটাই abstract যে লোকজন প্রথমে বুঝতে পারেনি যে ওটা সরস্বতীর ছবি। অনেকে বলেছিল বাউলিনীর ছবি। ক্যাপশন দিয়েছিলাম, ‘স্কিন কালার ডু নট ম্যাটার।’ আমরা কেন মনে করি বীণা পুস্তক রঞ্জিত হস্তে মানেই একজনকে ডাকসাইটে সাদা সুন্দরী হতে হবে? প্রকৃত সরস্বতীরা তো এমন হন না। আমার জীবনের প্রথম সরস্বতী সেই শিক্ষাই দিয়ে গেলেন।

Posted in সং থেকে বং, অনাবাসী ঢং | Leave a comment

আয় তবে সহচরী

“ও মাআআআ মেয়েটা কি লম্বা গোওওও।”
মাটিতে বাবু হয়ে বসা একটা পাঁচ বছরের চৌবাচ্চা টিভির দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে উঠলো ঠোঁটের চতুর্দিকে ছড়িয়ে এক থালা ভাত খেতে খেতে। তখন গটগট করে এক কৃষ্ণকলির-চোখ-হরিণের-মতো বঙ্গতনয়া মাথায় রাজকন্যার মত মুকুট পরে মাইক নিয়ে হাতে হেসে হেসে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। আর শিশুটি বিস্ফারিত নেত্রে অপলক চেয়ে আছে, এ কি স্বপ্ন! এ কি মায়া! এ কি প্রমদা, এ কি প্রমদার ছায়া!

“মা আমাকে বড় হয়ে কেমন দেখতে হবে?”
“ওই তো ওই মেয়েটার মতো।”
“আমি লম্বা হবো ওরকম?”
“হু।”
বলাই বাহুল্য এসব প্রশ্নের উত্তরের পেছনে বেশীক্ষণ সময় নষ্ট করে কারো হৃদয় তছনছ করার কোনো মানে হয় না। অন্তর্যামী আড়ালে কটাক্ষ করে হেসেছিলেন খানিক ওইদিন। হায় রে, অনেক চেষ্টা করে জীবনে অনেককিছু করা যায়, এভারেস্ট ডিঙানোও যায় হয়ত। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেললেও লম্বা তুই হতে পারবি না। ওই মেয়েটার থেকে পাঁচ ইঞ্চি বেঁটে হয়েই থাকতে হবে সারাজীবন।

“এ কী এ মেয়ে বাংলা ঠিকঠাক বলতে পারে না কেন?”
“দিল্লিতে মানুষ তো তাই।”
সেই বাচ্চাটি হেসে গড়িয়ে পড়ে মাটিতে। ট্যাঁশ বেশী। বাঙালি হয়ে বাংলা বলতে পারবে না!
“বাড়িতে বাবা মা শেখায়নি কেন?”
“আমি জানি না।”
না জানারই কথা। জীবন জগতের কত তথ্য-তত্ত্ব, কত কথা, স্বয়ং দেবাঃ ন জানন্তি।

সুস্মিতা সেন। জীবনের প্রথম আদর্শ। যার মতো হতে চেয়েছিলাম, তা যেই কারণেই হোক না কেন। সেই শিশুবয়েসের সবুজ মনের অবুঝ হিসেব: ও মেয়ে আমিও মেয়ে। ও বাঙালি আমিও বাঙালি। তাই ও যা হয়েছে আমিও তাই হব। একটু হিল জুতো পরে এক চক্কর কাটতে কেই বা না পারে। তখনও অভিধানে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগীতা নিয়ে নানা বিতর্ক, নারীর পন্যায়ণ ইত্যাদি শব্দ ঢোকেনি। কিছু সুন্দরী মেয়েকে প্রাইজ দিচ্ছে, তাতে কারই বা কোন পাকা ধানে মই দেওয়া হলো। কেন, আমিও তো ভালো জামা পরে নেমন্তন্ন বাড়ি খেতে গেলে লোকে প্রশংসা করে। আর স্টেজে তুলে সুন্দরদের প্রাইজ দিলেই দোষ?

আমার এক সহপাঠিনী ছোট থেকে খুব জুহি চাওলার ভক্ত ছিল। আনন্দলোক নামক পাকা পত্রিকার খোলনলচে উল্টে পাল্টে জুহি চাওলার ছবি দেখত। আমার কেন জানি না সুস্মিতা ছাড়া কাউকেই ভাল লাগত না। মনে হতো, ভীষণভাবে সেরিব্রাল এবং ব্যক্তিত্বময়ী একজন মহিলা, যিনি মাটিতে পা রাখলেই চারপাশের লোকজন দুভাগ হয়ে ওনার জন্যে জায়গা ছেড়ে দেবে। আশপাশের লোককে তোয়াক্কা না করার যে একটা ভাব, সেটাই হয়ত আরো সুন্দর করে তুলেছে এই মেয়েকে। অন্যান্য তারকাদের থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ২৫ বছর বয়েসে সিঙ্গেল মাদার হয়ে এক কন্যাকে দত্তক নেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্যে মনে মনে কুর্নিশ জানিয়েছিলাম।

“ইস মেয়েটা যে কেন সিনেমাতে এলো। কি বোকা বোকা ভাবে নাচছে।”
সিনেমাটার নামও বলিহারি “বিবি নাম্বার ওয়ান”। ১০-১১ বছর বয়েস থেকেই বলিউড সিনেমা দেখাতে হাতেখড়ি, এবং তখন থেকেই সালমান খানকে আজকে যতটা অসহ্য লাগে ঠিক ততটাই অসহ্য লাগত। এই মেয়ে কিনা সেই ‘হিরো’-র সাথে গিয়েই জুটি বাঁধলো। আমার ছোটবেলার আইডল, সুস্মিতা বলিউডে ঠিক সুবিধা করতে না পারার জন্য বেশ বাজে লাগতো মাঝে মাঝে। আচ্ছা, হিন্দি ছবিতে এমন কোনো চিত্রনাট্যকার নেই যে একটু ব্যতিক্রমী ধরণের নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের জন্যে ওনাকে কাস্টিং করতে পারে।

অনেকদিন পর এদিক ওদিক জমে থাকা কিছু কথা মনে পরে গেল। “ফিজা” সিনেমার “মেহবুব মেরে” গানটা দেখতে দেখতে। সিনেমাটা প্রথম দেখা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। সুনিধির গলার হিল্লোলের সাথে একজনই হয়ত শরীরী হিল্লোল তুলতে পারেন।

Posted in সং থেকে বং, অনাবাসী ঢং | Leave a comment

Hashtag Feminism

We live in a world which believes that most of the problems can be solved with a trending Twitter hashtag, irrespective of whatever the problems are, ranging from any topic related to feminism to farmer suicides. One of the most prominent women-in-tech campaign was #ILookLikeAnEngineer, asking women engineers to post photos with this hashtag. Feminism sells by the way, it is one of the most eye-ball grabbing topic that will flood your Facebook timeline. If you are a woman in technology, God help you. I feel like developing a machine learning algorithm to automatically remove this sort of hullaballoo from my timeline.

I remember the times from my high school. I was a class topper, but when it came to the engineering competitive tests (I was never inclined on becoming a doctor in the first place, going against the notion that girls are better at ‘bio-science’ than ‘pure-science’), I was constantly reminded that I will need to compete with guys. I was raised in an extremely gender agnostic household, but at the time of leaving school, somehow the vibe sounded like, “You are good in maths, but the guys are good as well, you need to beat them to get a good JEE rank.” I was baffled at that time by the societal presumptions, only much later I came across the classic Stanford paper titled “Stereotypes Do Reinforce the Status Quo” that helped me to dig deeper into the problem, which started perhaps in elementary school.

It is difficult being an only girl in an engineering class, especially if the girl is an introvert. Personally, I have always been of a gregarious nature, who did not feel shy to break the ice with the male classmates, but can completely relate towards the shy girl students who are always pressured into thinking, “Oh what if I miss classes one day and no one lends me the lecture notes?” or “These guys always get access to the previous years’ questions, they are so better prepared for the exams compared to me.” I have even heard tales of how women in ISI had quit the B.Stat. program upon realizing that they were the only females in the batch. One friend recalled the horror of being ridiculed by the entire gang of guys of her class in one IIT.

Even if you gel well with the guys, it is hard to avoid the attention being the only girl in the room in an engineering class, be it my Physics class in JU ETCE first year or the Estimation Theory class I took at UT last year. As Sheryl Sandberg pointed out in her book “Lean In”, people think of you as a woman first and an engineer second. The best way to handle that attention is to use the attention. Use that attention to cut someone short mid-sentence if you feel that that person is trying to rebuff your ideas. I am a shameless advocate of using controlled aggression with a smile on your lips to get things done. Whenever the ball is in your court, just rock it.

Women in engineering is just like any other woman. The profession which they have chosen for forty hours a week should not define their entire persona. They may also indulge in more ‘feminine“ hobbies like reading history the moment they leave work. They all have different challenges in their personal and professional lives, and wasting tons of newsprint on whether women in engineering should let down the hair in office or stop click-clacking the heels (by the way, many women chose to dress in jeans and flats because they are comfortable, not because they are trying to “fit in” with their male colleagues) seems to be utterly frivolous and takes the focus away from the more serious issues like encouraging elementary and middle school girls to have more fun with maths.

P.S. I do not look like an engineer in my Facebook profile picture. I just look like a human being who has paused midway on a hike.

Posted in General stuffs | Leave a comment

সাদা ফিতে এবং সিসিইউ

বেশ কদিনের প্রবাসী হলে আর যাই হোক বা না হোক, ট্র্যাভেল এজেন্টের কাজটা ভালো করা যায়। প্রথমতঃ সবকটা শহরের এয়ারপোর্ট কোড অধরস্থ হয়ে যায় (মুখের ভাষাটাই হয়ে যায়, “এবার কিন্তু আমার DFW-DXB, IAH টার দাম বড্ড বেশি”). তাই সাড়ে তিন সেকন্ড কম সময়ে টিকিট খোঁজা যায় প্রাইসলাইনে। জীবনে ভাবতে পারবেন প্রথম অক্ষরের মাথা খেয়ে ওয়াশিংটন-ডিসির কোড কিনা IAD! দ্বিতীয়তঃ কোন সময়ে ঝোপ বুঝে কোপটা মারলে সস্তায় টিকিট পাওয়া যাবে সেই নন-কনভেক্স প্রবলেমটার লোকাল অপটিমা খোঁজা যায়। তৃতীয়তঃ সবচেয়ে তাড়াতাড়ি সিকিউরিটি চেক করাতে হলে কি ভাবে ব্যাগ গোছাতে হবে তাতে বেশ কয়েকটা পিএইচডি ডিগ্রী পাওয়া যায়।

কলকাতা এয়ারপোর্ট আমার দেখা বিশ্বের একমাত্র বিমানবন্দর যেখানে আলাদা করে স্ক্যান করিয়ে লাগেজ ওজন করাতে দিতে হয়। (এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার মনটেরে এয়ারপোর্ট, যেখানে দিনে মাত্র দুটো প্লেন ছাড়ে, সেখানেও ইন-লাইন স্ক্যানিং আছে।) ২৩ কেজির লাল অঙ্ক ছাড়িয়ে গেলেই ব্যাস, আবার সাদা ফিতে কাটো, ভর-এর কনসারভেসন সূত্র মেনে মাল চালাচালি কর, আর ফের ওজন করাও। তবে একটা মজা আছে, এই সাদা ফিতেটা এতটাই জ্বলজ্বল করে দূর থেকে যে ব্যাঙ্গালোর বা বাল্টিমোর যেখানেই যাই, সুটকেস চিনতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই। তাই হাতলে মা চন্ডীর লাল ফিতে, রাংতা ইত্যাদি আলাদা করে বাঁধার কোনই প্রয়োজনই নেই।

সেদিন একটা বিতর্ক পড়ছিলাম, মানুষ কোনটাকে বেশী পছন্দ করেন: ক্যালকাটা না কলকাতা, বোম্বাই না মুম্বাই, মাদ্রাজ না চেন্নাই। ক্যালকাটা মনে করায় ব্রিটিশ আমলের এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ শহরকে। কলকাতা মনে করায় একবিংশ শতাব্দীকে আলিঙ্গন করতে চাওয়া এক ডট-কম জ্বরে কাঁপা শহরকে। এ ছাড়া আমার কাছে আরো একটা অপশান আছে, সিসিইউ। হ্যা, এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় কলকাতা। এই কলকাতার কোনো ভৌগলিক অস্তিত্ব না থাকলেও মানসিক অস্তিত্ব আছে। এ কলকাতা মনে করায় ঘরে ফেরার গানকে। মনে করায় সমুদ্রের স্রোতের মত চলে গিয়ে বারবার ফিরে আসা আশাকে। মনে করায় সময়ের সাথে পাঞ্জা লড়ে এগিয়ে চলা চোখ লাল করে ঘুম থেকে উঠে অতি সকালের ফ্লাইট ধরা ল্যাপটপ কাঁধের বাঙালিকে, যে বাঙালি ১৫০ টাকায় কফি বিন্স এন্ড টি লিভস থেকে কফি কিনতে পিছপা নয়।

বোর্ডিং পাসে লেখা এই তিন অক্ষর মনে করিয়ে দেয় প্রথমবার প্লেনে চড়ার উত্তেজনা, দ্বিতীয়বার প্লেনে চড়ার ঔদাসীন্য এবং তৃতীয়বার প্লেনে চড়ার নির্ভেজাল ল্যাদ। মনে করিয়ে দেয় বেশ কয়েকটা অগাস্ট আগে নাগেরবাজার দিয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার সময়কার একটা ফোন। এই তিনটে অক্ষরই প্লেনের আগের “জাগরণে যায় বিভাবরী”র স্মৃতি ফিরিয়ে আনে অবচেতন থেকে। এই সিসিউ মনে করায় ট্র্যাভেল এজেন্টের একটা বিপত্তির কারণে কিভাবে আমেরিকা আসার ইটিনেরারী বদলে গেল শেষ মুহুর্তে।

সবচেয়ে মজা, যখন টিকিটের দাম দেখার সময় রাউন্ড-ট্রিপ সিলেক্ট করে গন্তব্যস্থলে সিসিইউ ভরা হয়। একটা ট্যাব খুলে পুরনো বন্ধুদের মেসেজ করে জেনে নেওয়া, এই তুই কবে থেকে কবে থাকবি রে? উত্তর অনুসারে তারিখ ভরা। মনে মনে হিসাব করা, ঠিক কতদিন লুচি খাওয়া হয়নি। হিসেব শুরু, এবং একটু কম কম কালোজিরে দিয়ে মাছটা ম্যানেজ করে নেওয়া, আর কয়েক সপ্তাহ পরেই তো আসল মাছ খাওয়া যাবে কালোজিরে দিয়ে। এবার কটা চকলেট নেব? লিন্ট নেই এবার, আগেরবারের ঘিরাদেলির ৮৫%টা ঠিক বঙ্গরুচিতে সয়নি। নিতে হলে এবার ৬০%.

একচিলতে রোদ্দুরযুক্ত সাদা বোর্ডিং পাস। ২০ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর শেষ প্লেনের আগে স্যান্ডুইচ সাঁটানো। হোয়াটসয়াপে এক মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুনীর মেসেজ, “রিচড”? উত্তর দিলাম, ‘ইন DXB’. সেটার পিঠে উত্তর এলো, ‘ওহ অলমোস্ট হোম।’ হ্যা প্রায়। আর একটা মাত্র এয়ারপোর্ট কোড অতিক্রম করতে হবে। শেষ বিকেলের আলোতে ৬টা নাগাদ প্লেনের সাথে নামবে শেষ কিছু ক্লান্তি। আহ শান্তি। ৪৫ ডিগ্রী প্রায় কাত হয়ে গেছে ল্যান্ডিং-এর সময়। কয়েকটা ফ্লাইওভার দেখা যাচ্ছে আবছা। আহ, একটু পরেই ক্যালকাটা, কলকাতা আর সিসিউ-এর ত্রিবেণীসঙ্গম। চোখ বন্ধ হয়ে এলো।

ইতি-

মাধ্যমিকের বাধ্য মেয়ে

Posted in সং থেকে বং, অনাবাসী ঢং | Leave a comment

মোহিত সময়

(তারকাটা লেখা।)

“এই জন্নত মানে কি নরক?” জিজ্ঞেস করলাম শুভদীপকে।

“মানে! এই একটা মেয়ে নেচে নেচে প্রেমের গান গাইছে, আর তোর তা শুনে মনে হলো জন্নত মানে নরক? জন্নত মানে নরকের ঠিক উল্টোটা।”

চুপ করে গেলাম। আমার হিন্দি জ্ঞান পুরো শেকেস্পিয়ারের মত। স্যাটা বোস ভুল বলেছিলেন, রবিঠাকুর কিন্তু ভালো হিন্দি জানতেন, গুজরাটে গিয়ে বিশ্বভারতীর জন্য চাঁদা তুলতে যথেষ্ট ভালো বক্তৃতা দিয়েছিলেন হিন্দিতে।

গানটা হলো, ‘ইয়ে ইশ্ক হায়ে’, ‘জব উই মেট’ বইয়ের। তখনও সিনেমাটা দেখা হয়নি। মেট্রোতে মুখ গুঁজে টি২ পড়ে পড়ে শুধু জানি, এই সিনেমাটার পরেই শাহিদ-করিনার বিচ্ছেদ ঘটে যায় (যার ফলস্বরূপ টি২ নিউজপ্রিন্ট ভরাতে বয়েসে ছোট বয়ফ্রেন্ডকে ডেট করার মনস্ত্বত্তিক বিশ্লেষণ লেখে পাতার পর পাতা।) এই বিশেষ গানটা কেন জানিনা খুব দিত টিভিতে। তাই উত্তাল লাগত। বিশেষ করে শ্রেয়া ঘোষালের গলা।

হিন্দি সিনেমা খুব একটা হলে গিয়ে দেখার অভ্যাস কোনদিনই ছিল না। এবারও তার ব্যতিক্রম না ঘটিয়ে ‘জব উই মেট’ প্রথম দেখলাম সেট ম্যাক্সে। সিনেমা বোদ্ধার মাপকাঠিতে বিচার করতে পারব না, কিন্তু কেন জানিনা সিনেমাটা অসাধারণ ভালো লেগে যায়। আজ অব্দিও সেই ভালোলাগা অটুট আছে। এরপর থেকে যতবার সিনেমাটা দিয়েছে, হাতের সব কাজ ফেলে পাভলভের কুকুরের মত টিভির সামনে বসে যেতাম। সেমেস্টারের পরীক্ষা? ও থাক। শেষ মুহুর্তে ম্যানেজ দেব। আমার মা রীতিমত থ্রেট দেয়, আর একবার সিনেমাটা দেখলেই মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।

তখনও এত রমরমিয়ে ইউটিউব দেখার চল ছিল না। তাই পাইরেটেড ওয়েবসাইটের ইধার উধার থেকে এমপিথ্রি ডাউনলোড করা হলো, আর ডেস্কটপ চালালে একটা সিনেমারই গান বাজে আমার বাড়িতে। বিশেষ করে, ‘তুম সে হি’। সেই হামলে পরে বিফোরইউ দেখার যুগে দেখতাম এই গানটা সাপ্তাহিক rank-এ কত স্থানে রয়েছে। মোহিত চৌহানের ফ্যানক্লাবের আজীবন সদস্যপদ বোধহয় সেই থেকেই নেওয়া।

এই সিনেমাটার সাথে একটা অদ্ভূত ভালোলাগার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে পারিপার্শিক স্থান এবং কালের কারণে। তখন আমাদের থার্ড ইয়ার। তিন চতুর্থাংশ ইঞ্জিনিয়ার হয়েই গেছি। ভবিষ্যত সম্পর্কে অনেকটাই উদাসীন। উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা আছে কিন্তু সেটা স্বদেশে না বিদেশে সেটা ঠিক করিনি তখনও। হওয়ার স্রোতে ভেসে বেড়ানোর সময়, অনেকটা গীতের মত। বর্তমানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বাঁচা। যা হবে দেখা যাবে পরে।

এইসময় সরলরৈখিক জীবনে আসে একটা চাপ। গলার একটা অসুবিধার জন্যে ডাক্তার তিন সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিতে বলে গলার স্বরকে। গান তো দূর অস্ত, একটা কথাও বলা চলবে না। জীবনে কোনো ডাক্তারের প্রতি এত গাপিত্তি জ্বলেনি এর আগে। আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর তিন সপ্তাহ। বিশেষ করে আবার ‘সংস্কৃতি’র সময়। গোদের ওপর বিষফোঁড়া, সেইবার মোহিত চৌহান পারফর্ম করতে আসছেন। বাড়িতে অনেক অশান্তি করে যাওয়ার অনুমতি আদায় করা গেল না। খুব কমদিন এতটা রাগ করেছি হয়ত ভাগ্যের প্রতি।

হঠাত একটা ফোন। আমার বন্ধুবাহিনীর কন্ঠস্বর, “লাইভ শুনবি? তুম সে হি।”

মার্চ মাসে বৃষ্টি নেমেছিল। ছাতাটা ছুঁড়ে দিয়েছিলাম তেপান্তরের মাঠে।

 

ইতি-

মাধ্যমিকের বাধ্য মেয়ে।

Posted in General stuffs | Leave a comment

“Of course I am fine!”

This country is a lot polite compared to India. By lot, a mean a hell lot. Come one, did I ever imagine I would ever say “Thank You” to the bus driver of SD4 or the Tollygunje autowallah during my daily commute in Kolkata? Or ever be grateful (at least verbally) to the KMR folks after submitting my exam fees following an episode of fighting, pushing and elbowing for over two hours! This country has taught me to be polite, at least in my external demeanor. I know that I am not supposed to say, “How much more time would you take just to pay for your ticket” in the bus, neither am I supposed to express any exasperation to the waiter if our order takes abnormally long time to arrive on our table.

This external politeness has really made me an expert in “Passive-Aggresivese”, a term I coined to explain language or behavior that are legally polite without making any attempt at hiding the true intent. Following is my compilation of the ones which I have commonly encountered:

  1. Said: Hello, how’s going? (Especially to someone with whom we are not very friendly)

Meant: Does this conversation really contain any information? Of course I know that you are not going to say that you are feeling as if the world is crashing on your head.

  1. Said: Of course, it’s a well deserved honor. Have you let your adviser know?

Meant: Without your adviser, you are nothing honey. I know the amount of academic mollycoddling you need.

  1. Said: You are only a novice, it is okay if you make such mistakes.

Meant: Next time this happens, I am getting you fired.

  1. Said: I would refactor the code and go back and do more literature survey.

Meant: I want you to build a staircase to the moon in two days.

  1. Said: I am not angry at you, I perfectly understand that things do not always go along the intended route.

Meant: I perfectly understand the different ways of sharpening my knives to stab you if it weren’t illegal.

  1. Said: I would definitely take a look at your issue.

Meant: I have many other important issues to deal with than listening to your baby-whinings.

  1. Said: Wow, you are so lucky to have friends who gave you five birthday cakes.

Meant: You are a jackass of the Order of Merlin (Second Class), because all your friends are first class O.M.s.

  1. Said: Don’t worry, we are in this together.

Meant: I am in deep hot waters only because of use.

  1. Said: We shared the workload between the four of us (in group projects).

Meant: I did the work, another one Latex’ed, and the remaining two just came for the pizza.

  1. Said: Thanks. (Especially to Customer Care ‘Executives’)

Meant: I think I can go home and play on my keyboard the notation of the tune which you played while making me wait for one hour to speak to you.

  1. Said: Of course I am fine!

Meant: I am anything but. Most probably, you are the reason for it.

Posted in General stuffs | Leave a comment

শৃন্বন্তু বিশ্বে সরমায়াঃ পুত্রাঃ

৪ বছর ৩৫৯ দিন পরেও এই দেশটার সাথে ইমালশান হয়ে রইলাম। ওপর ওপর দেখলে মনে হয় মিশে গেছি, কিন্তু একটু খুঁটিয়ে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়েই চোখে পড়বে একটা তরলের খুব ছোট ছোট দানা না মিশে ভেসে বেড়াচ্ছে অন্যটায়। আমার এই দেশটাকে নানান না বোঝার একটা না-বোঝা হলো কুকুর নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত আদিখ্যেতা, এবং সামাজিকভাবে কুকুর অপ্রেমীদের অন্য গ্রহের প্রাণী হিসাবে দেখা। বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ, অনেকেই হয়ত কুকুর ভালবাসেন, তাঁদের আঘাত করতে চাই না। তাদেরকে বলব, কুকুরপ্রেমকে মানুষের ডিফল্ট ব্যবহার বলে ধরবেন না দয়া করে।

ছোটবেলা থেকেই আমার বাড়িতে বেড়াল কুকুর ইত্যাদির লোম ঝরার জন্যে স্বাস্থ্যের দিক থেকে পোষ্য রাখা হয়নি, এবং তার জন্যে কোনো ক্ষোভ জন্মায়নি মনে। উপরন্তু পাড়ায় নেড়িকুকুরের উদ্দাম দৌরাত্ম, তাই একা একা পড়তে যাওয়া আমার কাছে ছিল এক বিভীষিকা। মাধ্যমিকের মক টেস্ট দেওয়ার জন্যে পাথফাইন্ডার যাওয়ার জন্যে বেশি ঘুরে কম কুকুরযুক্ত রাস্তা দিয়ে যেতাম প্রতিদিন, তায় আবার ভর দুপুরে। তখন তো আবার তেনাদের উচ্চস্বরে চেঁচানোর মোক্ষম সময়। ক্লাস ফোরে বন্ধুর জন্মদিন খেয়ে ফেরার সময় বিকাল চারটে নাগাদ একটা ফাঁকা রাস্তায় তিনটে কুকুর তিনদিক থেকে ঘিরে ধরে আমাকে একেবারে কোনঠাসা করে দেয়। শুধু মনে আছে একটা দোকানের বন্ধ হয়ে যাওয়া শাটারে পিঠ ঠেকিয়ে আমি যিশুখ্রীস্টের মত দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি, তারপর ঠিক কি হলো মনে নেই, কোত্থেকে এক রিক্সাওয়ালা এসে কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে দিল। জীবনে খুব কম মানুষের প্রতি এরকম কৃতজ্ঞ থেকেছি।

কলকাতায় কুকুর পোষা অনেক বাড়িতে হলেও দেখেছি যে বেশিরভাগ মানুষই অতিথি এলে তার অসুবিধা হলে কুকুরকে দূরে সরিয়ে রাখেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ এদেশে সেই মানসিকতা কম লক্ষ্য করেছি। এমনি ভাব, নানা ও কিছু করবে না, শিক্ষিত কুকুর, শুধু এসে তোমার গা শুঁকে চলে যাবে। ছাই, শুঁকে চলে যাবে। ওদিকে যে আমার হৃদপিন্ড স্তব্ধ হয়ে যাবে সেই মুহুর্তে সেটা কি আপনি জানেন। এদেশে আসার কয়েকদিন পর থেকেই খেয়াল করি, আমার এক ল্যাবমেট কুকুর নিয়ে ল্যাবে আসে। ব্যাস, আমিও লুকোচুরি খেলা শুরু করে দিলাম, সে ল্যাবে ঢুকলেই আমি খাতা বই নিয়ে অন্য জায়গায়। পরে বুঝলাম, এদেশে কুকুর নিয়ে পড়াতে আসা এবং অফিসে আসা বিন্দুমাত্র অবাস্তব নয়, কারণ বেশিরভাগ সহকর্মীরাই হয়ত সারমেয়টির গলায় হাত বুলিয়ে দেবেন। মাঝখান থেকে আমার মত কিছু দুর্বলচিত্ত মানুষকে হরিনাম জপতে হয়।

আমার একটি কুকুরপ্রেমী সহকর্মী একবার তাঁর বাড়িতে আমাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করেন। খুবই ভালো মানুষ, কিন্তু বাঁধ সাধলো তার গোল্ডেন রিট্রিভার। কুকুরটিকে দেখতে খুবই সুন্দর, কিন্তু কিছু জিনিস জীবনে রামধনু হয়ে থাকাই ভালো, প্রজাপতির পাখা হওয়ার প্রয়োজন নেই। সেও দেখছে, ঘরে উপস্থিত সকল অতিথিদের মধ্যে আমি বাদে সকলেই তার মাথায় হাত বুলিয়েছে, তাই আমার কাছে আদর পাওয়ার জন্যে বেশি ছটফটানি। সেদিন জীবনের এক অসম্ভবকে সম্ভব করে একটা কুকুরে কানে একটু হাত বুলিয়েছিলাম, এখন ভাবতেও অবাক লাগে। এবার শুরু হলো কুকুরের মালকিনের তাঁর পোষ্য নিয়ে সাতকাহন। কুকুরদের রীতিমত ‘পাপ ১’, ‘পাপ ২’ (পাপ মানে ‘puppy’-র সংক্ষিপ্ত নাম) ইত্যাদি ক্লাস হয়। বয়েস অনুযায়ী শিক্ষা। বিভিন্ন কুকুরের মালিকরা গল্প করেন, সে কি আপনারটা ‘পাপ ২’ করছে! আমারটা তো ‘পাপ ১’-এই আটকে আছে কয়েকমাস। মনে পরে গেল ক্লাস ২-এর বাচ্চাদের মায়েরা ইস্কুলের ঘন্টা পড়ার আগে গেটের সামনে জটলা করে কার বাচ্চা কতগুলো গুণ করতে পারে মিনিটে, কে মোঘল সাম্রাজ্যের সকল বাদশার নাম মুখস্ত বলতে পারেন সেরকম গল্প করেন। আমি শুধু মনে মনে ঠিক করে নিলাম, যে হারে কুকুরের টায়ালীন আপনার হাতে লাগছে ২৪ ঘন্টা, আগামী সোমবার থেকে দয়া করে আমার ল্যাপটপে হাত দেবেন না।

আমেরিকান কেনেল ক্লাব গুড কেনাইন সিটিজেন টেস্ট বলে একটি পরীক্ষার আয়োজন করেন, সেটায় পাশ করলে কুকুরদের বিভিন্ন হোটেলে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। এবং সেই পরীক্ষায় পাশের জন্যে কুকুরদের যা পড়তে হয়, আমাকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্যেও অত পড়াশোনা করতে হয়নি। আমার এই সহকর্মীর চিন্তা, রোজ বিকেলেই তো টিউশন নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ও না এবার পাশ করবে না মনে হয়, এখনও অনেক কিছু শেখেনি। আমাকেও ভোটার কার্ডের ছবির মত মুখের ভাব করে গভীর চিন্তান্বিত ভাবে বলতে হয়, ও আচ্ছা, খুবই চিন্তার বিষয়। অত ভাববেন না, সামনের বছর পরীক্ষা দিলে পাশ করেই যাবে, সুযোগ তো আর মাত্র একবার আসে না।

আজকাল আমরা সবাই রাজা আমাদের এই app-এর রাজত্বে। সেদিন রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাফিক সিগনালের গায়ে একটি বিজ্ঞাপন সাঁটা দেখে চোখটা আটকে গেল। কাগজটায় লেখা ‘BarkHappy’. আপনার কুকুর যদি নিঃসঙ্গ থাকে, তবে তার মনস্ত্বাত্তিক পূর্ণ বিকাশের জন্যে এই app-এর মাধ্যমে সমমর্মী (??) অন্যান্য কুকুরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আপনার কুকুরের বন্ধু খোঁজার উদ্দেশ্যে। ভাবলাম, ‘BarkHappy’ না রেখে তো সরাসরি ‘DogBook’ নামটাই রাখতে পারতেন।

অনেকের মনে হবে, অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলছি। কিন্তু একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে পোষ্য নিয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি ব্যক্তিগত ভাবে পোষায় না একদমই। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ।

ইতি

-মাধ্যমিকের বাধ্য মেয়ে

Posted in General stuffs | Leave a comment