আয় তবে সহচরী

“ও মাআআআ মেয়েটা কি লম্বা গোওওও।”
মাটিতে বাবু হয়ে বসা একটা পাঁচ বছরের চৌবাচ্চা টিভির দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে উঠলো ঠোঁটের চতুর্দিকে ছড়িয়ে এক থালা ভাত খেতে খেতে। তখন গটগট করে এক কৃষ্ণকলির-চোখ-হরিণের-মতো বঙ্গতনয়া মাথায় রাজকন্যার মত মুকুট পরে মাইক নিয়ে হাতে হেসে হেসে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। আর শিশুটি বিস্ফারিত নেত্রে অপলক চেয়ে আছে, এ কি স্বপ্ন! এ কি মায়া! এ কি প্রমদা, এ কি প্রমদার ছায়া!

“মা আমাকে বড় হয়ে কেমন দেখতে হবে?”
“ওই তো ওই মেয়েটার মতো।”
“আমি লম্বা হবো ওরকম?”
“হু।”
বলাই বাহুল্য এসব প্রশ্নের উত্তরের পেছনে বেশীক্ষণ সময় নষ্ট করে কারো হৃদয় তছনছ করার কোনো মানে হয় না। অন্তর্যামী আড়ালে কটাক্ষ করে হেসেছিলেন খানিক ওইদিন। হায় রে, অনেক চেষ্টা করে জীবনে অনেককিছু করা যায়, এভারেস্ট ডিঙানোও যায় হয়ত। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেললেও লম্বা তুই হতে পারবি না। ওই মেয়েটার থেকে পাঁচ ইঞ্চি বেঁটে হয়েই থাকতে হবে সারাজীবন।

“এ কী এ মেয়ে বাংলা ঠিকঠাক বলতে পারে না কেন?”
“দিল্লিতে মানুষ তো তাই।”
সেই বাচ্চাটি হেসে গড়িয়ে পড়ে মাটিতে। ট্যাঁশ বেশী। বাঙালি হয়ে বাংলা বলতে পারবে না!
“বাড়িতে বাবা মা শেখায়নি কেন?”
“আমি জানি না।”
না জানারই কথা। জীবন জগতের কত তথ্য-তত্ত্ব, কত কথা, স্বয়ং দেবাঃ ন জানন্তি।

সুস্মিতা সেন। জীবনের প্রথম আদর্শ। যার মতো হতে চেয়েছিলাম, তা যেই কারণেই হোক না কেন। সেই শিশুবয়েসের সবুজ মনের অবুঝ হিসেব: ও মেয়ে আমিও মেয়ে। ও বাঙালি আমিও বাঙালি। তাই ও যা হয়েছে আমিও তাই হব। একটু হিল জুতো পরে এক চক্কর কাটতে কেই বা না পারে। তখনও অভিধানে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগীতা নিয়ে নানা বিতর্ক, নারীর পন্যায়ণ ইত্যাদি শব্দ ঢোকেনি। কিছু সুন্দরী মেয়েকে প্রাইজ দিচ্ছে, তাতে কারই বা কোন পাকা ধানে মই দেওয়া হলো। কেন, আমিও তো ভালো জামা পরে নেমন্তন্ন বাড়ি খেতে গেলে লোকে প্রশংসা করে। আর স্টেজে তুলে সুন্দরদের প্রাইজ দিলেই দোষ?

আমার এক সহপাঠিনী ছোট থেকে খুব জুহি চাওলার ভক্ত ছিল। আনন্দলোক নামক পাকা পত্রিকার খোলনলচে উল্টে পাল্টে জুহি চাওলার ছবি দেখত। আমার কেন জানি না সুস্মিতা ছাড়া কাউকেই ভাল লাগত না। মনে হতো, ভীষণভাবে সেরিব্রাল এবং ব্যক্তিত্বময়ী একজন মহিলা, যিনি মাটিতে পা রাখলেই চারপাশের লোকজন দুভাগ হয়ে ওনার জন্যে জায়গা ছেড়ে দেবে। আশপাশের লোককে তোয়াক্কা না করার যে একটা ভাব, সেটাই হয়ত আরো সুন্দর করে তুলেছে এই মেয়েকে। অন্যান্য তারকাদের থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ২৫ বছর বয়েসে সিঙ্গেল মাদার হয়ে এক কন্যাকে দত্তক নেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্যে মনে মনে কুর্নিশ জানিয়েছিলাম।

“ইস মেয়েটা যে কেন সিনেমাতে এলো। কি বোকা বোকা ভাবে নাচছে।”
সিনেমাটার নামও বলিহারি “বিবি নাম্বার ওয়ান”। ১০-১১ বছর বয়েস থেকেই বলিউড সিনেমা দেখাতে হাতেখড়ি, এবং তখন থেকেই সালমান খানকে আজকে যতটা অসহ্য লাগে ঠিক ততটাই অসহ্য লাগত। এই মেয়ে কিনা সেই ‘হিরো’-র সাথে গিয়েই জুটি বাঁধলো। আমার ছোটবেলার আইডল, সুস্মিতা বলিউডে ঠিক সুবিধা করতে না পারার জন্য বেশ বাজে লাগতো মাঝে মাঝে। আচ্ছা, হিন্দি ছবিতে এমন কোনো চিত্রনাট্যকার নেই যে একটু ব্যতিক্রমী ধরণের নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের জন্যে ওনাকে কাস্টিং করতে পারে।

অনেকদিন পর এদিক ওদিক জমে থাকা কিছু কথা মনে পরে গেল। “ফিজা” সিনেমার “মেহবুব মেরে” গানটা দেখতে দেখতে। সিনেমাটা প্রথম দেখা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। সুনিধির গলার হিল্লোলের সাথে একজনই হয়ত শরীরী হিল্লোল তুলতে পারেন।

About DebaratiK

As one anonymous Quora user said, "You really don't know how much you don't know", I am trying to figure out now how much I don't know, and then would decide on what I should be knowing better than others! If I stumble across something worth knowing to me, I would share that in this blog.
This entry was posted in সং থেকে বং, অনাবাসী ঢং. Bookmark the permalink.

Leave a comment